মাহফুজুর রহমান: ৯ বছর প্রবাস থেকে দেশে ফিরে পাগলপ্রায় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার যুবক দ্বীন ইসলাম। মা সূর্যবান বেগমের একাউন্টে পাঠানো দীর্ঘ জীবনের সঞ্চিত প্রায় ২১ লাখ টাকার জায়গায় দেশে ফিরে পান মাত্র ৭ হাজার ৪ শত টাকা।
আচমকা এমন সংবাদে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে ঐ যুবকের। ব্যাংকের টেবিল টু টেবিল ঘুরে ঘুরে মিলছেনা কোন সমাধান। বর্তমানে মানসিকভাবে চরম ভেঙ্গে পড়েছেন দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটানো ওই রেমিটেন্স যোদ্ধা। এ বিষয়ে মা সূর্যবান বেগম মেয়ে ও মেয়ের জামাতা সহ কয়েকজনকে আসামী করে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের তফাদার পাড়ার সিরাজুল আলী প্রধানের ছেলে দ্বীন ইসলাম বিগত ১১ বছর পূর্বে প্রবাসে পাড়ি জমান। লিবিয়া থেকে দুই বছর পর ফিরে এসে পুনরায় সৌদি আরব যান। সেখানে থেকে ৯ বছরে প্রায় ২১ লাখ টাকা পাঠিয়েছেন তার মা সূর্যবান বেগমের অ্যাকাউন্টে।
বৃদ্ধা মায়ের চেকবই চুরি করে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে তার আপন বোন হেলেনা আক্তার কল্পনা উপজেলার নতুন বাজারস্থ সোনালী ব্যাংকের শাখার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
শুধু তাই নয়, নিজের এলাকা তপাদারপাড়ার বিভিন্ন মানুষের সরলতার সুযোগে ঋণের মাধ্যমে কল্পনা হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও সবার অজান্তে নিজ বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে বর্তমানে পলাতক কল্পনা বেগম ও তার স্বামী আজাদ।
দ্বীন ইসলাম দেশে ফিরে জমি কিনবেন, ঘর করবেন এবং বিয়ে করার প্রস্তুতি নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেন। দেশে এসে তার মাকে নিয়ে টাকা তুলতে সোনালি ব্যাংক ফরাজীকান্দি শাখায় গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্টে মাত্র সাত হাজার চারশত টাকা আছে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সূর্যবান বেগম বলেন, আমার অ্যাকাউন্ট (১৫০৩২৩৪০৩৬০৭৬) থেকে আমার ছেলে বিদেশ যাওয়ার পর থেকে কোনও টাকা উত্তোলন করিনি। আমার চেক বই চুরি করে নিয়ে আমার মেয়ে হেলেনা আক্তার কল্পনা ব্যাংকের ম্যানেজারের গাফিলতি সহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে স্বাক্ষর জাল করে টাকাগুলো তুলে নিয়ে গেছে। সে বিভিন্ন সময়ে এক লাখ, দুই লাখ তিন লাখ টাকা করে ভাগে ভাগে টাকাগুলো তুলেছে। এখন আমার ছেলে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
প্রবাসী দ্বীন ইসলাম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জানান, আমরা প্রবাস থেকে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠাই। আমাদের টাকার যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তো আমাদের দেশে টাকা পাঠানোর কোনও দরকার নেই। এভাবে ব্যাংক থেকে স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন হলে তো দেশের মানুষ ফকির হয়ে যাবে। টাকা চুরি করার জন্য সে আমার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রও জাল করেছে। আমি নিজেও লজ্জিত আমার বোন হয়ে সে এমন জঘন্য কাজটি করতে পারলো। আর ব্যাংক কর্মকর্তারা কিভাবে তাকে সাহায্য করলেন? আমি সরকারের কাছে সঠিক তদন্তপূর্বক আমার টাকার সুব্যবস্থা কামনা করছি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ফরাজীকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক মো. মোস্তফা পাটোয়ারীর জানতে চাইলে তিনি দায়সাড়া বক্তব্য দেন এবং একপর্যায়ে উৎকোচের মাধ্যমে সমজোতার চেষ্ঠা করেন।
এদিকে অভিযুক্ত হেলেনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলার জন্য টাকা উত্তোলনকৃত চেকের অপর পৃষ্ঠায় দেয়া মুঠোফোন নম্বরে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।