নিউজ ডেক্সঃ
দেশ-বিদেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাইয়ে দিতে পারেন তারা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া যেন তাদেরই কাজ। যে কারো বড় প্রতিষ্ঠানকে মোটা অংকের বিনিয়োগ এনে দিতে বিশ্বের ১৫টি দেশের ৩২টি ব্যাংকের স্বীকৃত ১১৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার রয়েছে চুক্তি। দেশে বেকারত্ব দূর ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে তিনি দিচ্ছেন স্বল্প সুদে লোন করিয়ে দেয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা। সর্বনিম্ন ২০ লাখ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লোন করিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক লোন সার্ভিস সেন্টার (আইবিএল) নামের প্রতারণার দোকান খুলে বসেছেন তারা।
এ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে প্রশাসন জানতে পারলো, এই বিষয়গুলো সবই ভুয়া। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বোকা বানিয়ে ঋণ প্রসেসিং করার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অন্যতম এই কারিগরের নাম রাব্বি শাকিল ওরফে ডি.জে শাকিল (৩২)। তিনি তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ পৌরসভার গেটের পাশেই তার ভিআইপি সাজসজ্জার অফিস। সেখান থেকেই প্রতারণার নেটওয়ার্ক চালান দেশজুড়ে।

ডি.জে শাকিলের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় খাঁ পাড়ায়। তার বাবা কাজী গোলাম মোস্তফা হলেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি।
গতকাল বুধবার রাতে বগুড়া পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাছে দুই সহযোগীসহ শাকিল গ্রেফতার হন। তারা হলেন- প্রতারণার জন্য তৈরি করা তার প্রতিষ্ঠানে আইটি এক্সপার্ট একই উপজেলার কুসুন্দি গ্রামের হুমায়ন কবির (২৮), ম্যানেজার নওগাঁর মান্দার গাড়িক্ষেত্র গ্রামের হারুনর রশিদ সাইফুল (২৬)।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, বগুড়ার ভুক্তভোগী দুই যুবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বগুড়া সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ইমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছে থেকে উদ্ধার করা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকদের স্বাক্ষরিত টাকার অংক ছাড়া চেকের পাতা ১০টি, ৫শ কোটি টাকার পূবালী ব্যাংকের টাঙ্গাইল শাখার তাসবির এন্টারপ্রাইজের নামে ১টি চেক ও ৫ কোটি টাকার আরেকটি চেক ওই ব্যাংকের একই শাখার জাবের এন্টারপ্রাইজের নামে। এছাড়া একই শাখার ২শ কোটি টাকার আরও একটি চেক ইস্যু করা হয়েছে শিহাব উদ্দিন আহম্মেদের নামে। মোটা অংকের ব্যাংক লোনের আশায় তারিখ ছাড়া জামানত হিসেবে এই চেকগুলো প্রদান করেছেন পূবালী ব্যাংক টাঙ্গাইল প্রধান শাখার গ্রাহক (এসি নং : ০৪৭০৯০১০৪৪৬০৬) রাজলাক্সামি ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক তাপস কুমার পাল। বাকি ১ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকার চেকগুলো সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের রয়েছে।
বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আসলাম আলী বলেন, অভিযানকালে ডি.জে শাকিলের সুসজ্জিত অফিস কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ১২০১ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকার ভুয়া চেক, ৫০টির বেশি টাকার অংক ছাড়া স্বাক্ষর করা চেক, সামরিক বাহিনীসহ সরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র ও চুক্তিনামা, জাল স্ট্যাম্প ও ড্যামি পেপার, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির ৬০টি সিম কার্ড, তাদের নিজস্ব পরিচালিত ২২টি অনলাইন নিউজ পোর্টালের তথ্য এবং আইডি কার্ড, দেশের সুনামধন্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভুয়া নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১২টি ফেসবুক আইডি, ৩৫টি ফেসবুক পেইজ, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিলসহ চিঠি তৈরির ফরমেটসহ ২ টেরাবাইটের হার্ডডিস্ক, প্রিন্টারসহ ৩টি সিপিইউ ও ৩টি মনিটর এবং পূবালী ব্যাংকের সচল ৭টি ব্যাংক একাউন্ট।
এছাড়া, সরকারি সিল মোহর ও প্যাড ব্যবহার করে তৈরি করা বেশ কিছু ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয় ডি.জে শাকিলের অফিস থেকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজশাহীর বাঘমারার বাবুলুর রহমানের নামে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের তৈরি মিটার রিডার কাম ম্যাসেনজারের ভুয়া নিয়োগপত্র, নাটোরের গুরুদাসপুরের আরিফুল ইসলামের নামে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের ভুয়া নিয়োগপত্র, বগুড়ার হাজরাদীঘি তেলধাপ গ্রামের নাজেম উদ্দিনের নামে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দফতরী কাম প্রহরীর ভুয়া নিয়োগ পত্র ও রংপুরের বদরগঞ্জের দক্ষিণ বাওচন্ডি গ্রামের চাঁদ বাবুর নামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিস সহায়ক পদের ভুয়া নিয়োগপত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিল জানিয়েছে একেকটি ভুয়া নিয়োগে সে ৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে।
অভিযুক্ত ডি.জে শাকিল প্রতারণা প্রসঙ্গে বলেন, আমি প্রতারণা করে নেয়া এসব টাকা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে লাগিয়েছি। এছাড়া ফূর্তি করেও অনেক টাকা নষ্ট করেছি। এখন আমার ভুল বুঝতে পারছি।